ইতিহাসে আমার জন্ম স্থান বদরগঞ্জঃ
বদরগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের রংপুর জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। বদরগঞ্জ থানা রূপে আত্মপ্রকাশ করে ১৭৯৩ সালে এবং উপজেলা হিসেবে ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে।
বদরগঞ্জ
উপজেলা
বদরগঞ্জ রংপুর বিভাগ-এ অবস্থিত
বাংলাদেশে বদরগঞ্জ উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক:
২৫°৪০′ উত্তর ৮৯°৩′
বদরগঞ্জ উপজেলা রংপুর শহর থেকে পশ্চিমে, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার পূর্বে অবস্থিত। এর দক্ষিণে মিঠাপুকুর উপজেলা এবং উত্তরে নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলা অবস্থিত। উত্তর অক্ষাংশে ২৫°৩২' ও ২৫°৪৬' এবং পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ৮৮°৫৬' ও ৮৯°১০' অবস্থিত। এর আয়তন ৩০১,২৯ বর্গ কিঃমিঃ।
রংপুর জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে বদরগঞ্জ একটি উপজেলা । রংপুর শহর থেকে ২৩ কি:মি: পশ্চিমে বদরগঞ্জ উপজেলার অবস্থান।
বদরগঞ্জ উপজেলা ১০ টি ইউনিয়ন এবং ১ টি পৌর সভার সমন্বয়ে গঠিত।
বদরগঞ্জ উপজেলা ঐতিহাসিক এবং ব্যবসা বানিজ্যের দিকথেকে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। বদরগঞ্জের আরেক প্রাচীন নাম কুমারগঞ্জ। প্রাচীন কালে এখানে কামার, কুমার, জেলে প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতো। কুমার গোষ্ঠির কারনে এর নাম হয়েছিল কুমারগঞ্জ যা ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত বলোবৎ ছিল। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ১২ নং রেগুলেশন অনুযায়ী কুমারগঞ্জ তৎকালীন রংপুর জেলার ২১ টি থানার একটি । ১৮২৯ খ্রি: উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমলে কোম্পানি সরকার জেলাসমূহ মহকুমা এ বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ১৯৮৪ খ্রি: পযর্ন্ত বদরগঞ্জ থানা রংপুর সদর মহকুমার আওতায় ছিল। ১৯৮৪ খ্রি: ১ ফেব্রুয়ারী প্রশাসনিক পরিবর্তনের ফলে রংপুর জেলার আওতায় বদরগঞ্জ উপজেলা হিসাবে প্রশাসনিক স্বকৃতি লাভ করে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ আমোলে বদরগঞ্জে এক প্রভাবশালী জমিদার শ্রী বৈকুন্ঠ বরাট্র তার নাম অনুসারে এই এলাকার নাম বৈকুন্ঠপুর করে ছিলেন। প্রাচীন কালে বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলে পরিপূর্ণ এবং নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি স্বপদসংকুল স্থান হিসাবে পরিচিত ছিল এবং এই স্থান চোর দস্যুদের অভয়ারণ্য হিসাবে পরিগণিত ছিল। পরবর্তীতে আধ্যাত্মিক সুফি সাধক ও দরবেশ হযরত শাহ্ বদর (রাঃ) এর নামানুসারেই বদরগঞ্জ নামকরণ হয়েছে বলে লোকশ্রুতি আছে। বদরগঞ্জের কেন্দ্রস্থলে তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ রয়েছে। আবার অনেকের ধারণা গৌরের নবাবের প্রতিনিধি বদরজঙ্গের নাম অনুসারে এ উপজেলার নামকরণ হয়েছে। জন নন্দিত মহান সাধক পীর ও ইসলাম প্রচারক হযরত শাহ্ বদর (রাঃ) বা বদর পীর (রাঃ) এর স্মৃতি সমুজ্জল বদরগঞ্জ একটি বিখ্যাত জনপদ হিসেবে গড়ে উঠেছে। তিনি কে, কোথাকার মানুষ, কোন সময়ে তিনি এ অঞ্চলে পদার্পন কতেছেন যা আজও অজানা।
এ উপজেলা উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত তিন চতুথাংশ বারেন্দ্রীক এবং বাকী অংশ পলি ও বালু মাটি দ্বারা সবুজ সমতল ভূমিতে গঠিত। তাছাড়াও কোন কোন এলাকা বাদামী মাটিতে গঠিত বলে অনুমিত হয় যা স্থানীয়ভাবে কুমার মাটি বলে অভিহিত। এখানকার মধুপুর, গোপালপুর কুতুবপুরের উত্তরাংশ, রামনাথপুর গোপীনাথপুর, রাধানগর ছাড়াও লোহানীপাড়া ও কালু পাড়ার কিছু এলাকা লালমাটিতে সমৃদ্ধ।
উল্লেখযোগ্য নদী :
১.যমুনাশ্বরী,
২.চিকলী,
৩.করোতোয়া ও
৪.ঘৃলাই নদী।
উল্লেখযোগ্য নৃতাত্তিক জাতিগোষ্ঠ :
১.সাঁওতাল,
২.উড়াও,
৩.মুসহার,
৪.তুরি ,
৫.রাজবংশী ইত্যাদি
উল্লেখযোগ্য প্রচীন স্থান :
১.বদর পীরের মাজার,
২.ভীমেরগড়,
৩.লালদিঘী ৯ গুম্বুজ মসজিদ,
৪.নান্দিনার দিঘি,
৫.গোপালপুর জমিদার বাড়ী ইত্যাদি প্রচীন স্থান সমূহ এই উপজেলার অন্তগত।
আয়তনঃ
• মোট
৩০১.২৯ বর্গকিমি (১১৬.৩৩ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
• মোট
২,৫৭,৮৪৬
• জনঘনত্বঃ
৮৬০/বর্গকিমি (২,২০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হারঃ
• মোট
৪৩%
সময় অঞ্চলঃ
বিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৮৫ ০৩
প্রশাসনিক এলাকা সম্পাদনা
ইউনিয়ন - ১০টি,
মৌজা - ৬৪ টি,
গ্রাম - ১২০ টি
জনসংখ্যা সম্পাদনাঃ
বদরগঞ্জ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২৫৭৮৪৬ পুরুষের সংখ্যা ১৩২৬১১, এবং নারীর সংখ্যা ১২৫২৩৫। এই উপজেলায় মুসলিম সংখ্যা ২২৫৫০২ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ৩০০৭৩, এছাড়াও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যাও বিশেষ অবস্থান নিয়ে আছে।
শিক্ষা সম্পাদনাঃ
বদরগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার গড় আনুপাত ৩৮.২% । পুরুষ শিক্ষার হার ৪২.৮৩% এবং নারী শিক্ষার হার ৩৩.৩% । বদরগঞ্জে ৭ টি কলেজ, ৫৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৬১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪১ টি মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য বদরগঞ্জ সরকারি ডিগ্রী কলেজ, বদরগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বদরগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বকশিগঞ্জ হাইস্কুল ও কলেজ, #চেংমারী উচ্চ বিদ্যালয় এবং বদরগঞ্জ ওয়ারেছিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি সম্পাদনাঃ
বদরগঞ্জ উপজেলার মোট জনসংখ্যার ৬৯.৫৪ শতাংশ জীবিকা হিসেবে কৃষির উপর নির্ভরশীল । তবে ৩.৩২% শ্রমিক, 0.৪৮% শিল্প, ১৩.৮% ব্যবসা, ৪.৫৮% সরকারি চাকরিজীবী বসবাস করেন। এখানকার প্রধান শস্য ধান, পাট, গম, আলু, সরিষা, তামাক, শাকসবজি, ছাড়াও কাউন, তিল, ডালের উৎপাদন হয়ে থাকে। এই এলাকার প্রধান ফল আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, বড়ই, জাম, আতা ও জামরুল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পাদনাঃ
জীতেন দত্ত - তেভাগা আন্দোলনের নেতা;
আনিছুল হক চৌধুরী - রাজনীতিবিদ, সাবেক যোগাযোগ প্রতীমন্ত্রী।
#সংগৃহীত
১.তথ্যসূত্রঃ
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক বদরগঞ্জ উপজেলা"।
২.লোক ইতিহাস